নিউজ ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুক্রবার (০৩ মে) সকালে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষিরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আর শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় প্রবল আকারে আঘাত হানতে পারে ‘ফণী’। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার যৌথ প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে উপকূলীয় জেলার উপর দিয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশের উপকুলীয় ১৯ জেলায় ঘূর্নিঝড়ের সাম্ভব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও জানমাল রক্ষায় নেয়া হয়েছে নানান পদক্ষেপ। দেশের আভ্যন্তরিন সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই জনগনকে সতর্ক থাকতে এবং নিরাপদে ঘূর্ণীঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে মাইকিং শুরু হয়েছে। বেশকিছু উপদ্রুত এলাকায় স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং জনগনকে শুকনো খাবার সাথে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে ।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ মে) আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই মুহুর্ত ঝড়ের গতি ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে ধারনা করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফনি আরো ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ৩ মে বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে হয়ে ৩ মে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪ মে শনিবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
শুরু থেকে ধারনা করা হচ্ছিল ঘূর্নিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে আঘাত হানবে, তারপর ভাবা হয়েছিল কর্নাটক উপকূলে যাবে, কিন্ত ঝড়টি আজ পর্যন্ত ভারতীয় ভূখন্ডে না প্রবেশ করে উপকুল ঘেঁষে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। এই মুহুর্ত ঝড়টি ভারতের উড়িষ্যার উপকূলের খুব কাছে অবস্থান করছে । ঝড়ের সাম্ভব্য ক্ষয় ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যেই ভারত উড়িষ্যার সাথে চলাচলকারি তাদের ১০৩ টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে এবং ৩৮ টি ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ১০ লাখ লোককে উপকুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং নৌবাহিনী , উপকুলরক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন যদি ঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে তাহলে বাংলাদেশ উপকূলে আসার আগে দূর্বল হয়ে পড়বে এবং ক্ষতির পরিমান অনেকাংশেই কম হবে। তবে ঘূর্নীঝড় ‘ফনি বার বার তার স্বরূপ বদল করছে এবং ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। গতকাল রাত পর্যন্ত ঘূর্নীঝড় ‘ফনি ঘন্টায় ১০/১১ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল। কিন্ত আজ সকাল থেকে সে আরও বেশী শক্তি সন্চয় করে ঘন্টায় ২০/২৫ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে । যেকারনে গতকাল বলা হয়েছিল এই ঝড় আগামী ৫/৬ তারিখের দিকে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে আজ তা দু’দিন এগিয়ে আনা হয়েছ।তাই এর আগে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভবনা ৬০ ভাগ ঘোষনা করলেও বর্তমানে তা শতভাগে উন্নীত করে দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার ।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।