মোঃ সাইফুল ইসলাম: সীমান্ত জেলা সাতক্ষিরার দেবহাটা উপজেলার নাংলা হতে নওয়াপাড় স্লুইচ গেট পর্যন্ত পুরাতন বেড়িবাধের অধিকাংশ স্থানে ভেঙ্গে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্বল বেড়িবাধ প্রায় পুরোপুরি ভেঙ্গে যেতে বসেছে। আর এতে দেবহাটা উপজেলার ইছামতি সীমান্ত সংলগ্ন খানজিয়া, নাংলা, নওয়াপাড়া, ছুটিপুর, গাংআটি, হাদিপুর, বসন্তপুর, খানজিয়া, শুলপুর, নলতা, শেহারা, দুরদুরে, মাঘুরালীসহ প্রায় ১০-১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশাংঙ্কা বিরাজ করছে। এসব এলাকার মানুষের রাত শুরু হয় দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে। কারণ নদী ভাঙ্গনের ফলে তলিয়ে যেতে পারে শতশত মৎস্যঘের, হাজার হাজার বিঘার ফসলের আবাদ এবং ভেসে যাবে বসতবাড়ীর আঙ্গিনা। এমনকি নদীর পানিতে একাকার হয়ে যাবে গোটা এলাকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, থানা ভবন হতে কয়েক গজ দুরে সুশীলগাঁতী নামক স্থানে ২০০৯ সালে বেড়িবাধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৩ সালে আবারো ভাঙ্গন দেখা দেয় একই স্থানে। এছাড়া ২০১৪ ও ১৫সালে ভাঙ্গন দেখা যায় নাংলা বাজার সংলগ্ন বেড়িতে, দেবহাটা পাঠবাড়ি সংলগ্ন বেড়িতে ও সুশীলগাঁতী-টাউনশ্রীপুরের বেশ কিছু স্থানে। কিন্ত বার বার এই নদীর ভেড়িবাধে ভাঙন হলেও কখনই কোন টেকসই বাধ নির্মান করেনি কতৃপক্ষ। যে কারনে বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এলাকাবাসীকে।
সরকারের উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি এই ভাঙন স্থান পরিদর্শন করলেও এত বছরেও কোন টেকসই বাধ নির্মান করেনি। তারপরও বিভিন্ন সময়ে এই বাধ নির্মানে যে বাজেট করা হয় তার সামান্য অংশের কাজ হয় আর সিংহা ভাগ চলে যায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের পকেটে। এসব দূর্নীতি আর অনিয়মের ফলে ২০১৬ সালে দেখা দেয় নদী বেড়িবাধে তীব্র ফাটল আর ভাঙ্গন। আর প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের ফলে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশ। দেবহাটা ভূমি অফিসের আর এস রেকর্ড মোতাবেক উপজেলার ভাতশালা সীমান্তের ৫৫.০০একর, টাউন শ্রীপুর মৌজার ২৬১৩ ও ৯৯৫ দাগের ৯৬.৬৩ একর, সুশিলগাতী মৌজার ১১৫০ দাগের ২২.৪১ একর, শিবনগর মৌজার ৭০৭ ও ৭৩৮ দাগের ২৫.২১ একর, দেবহাটা মৌজার ৫৫০৫ দাগের ৯.৪৪ একর, বসন্তপুর মৌজার ১,২ দাগের ১.৩৭ একর জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে।
সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দারা জানান, নদীর বেড়িবাধ যে ভাবে ভাংতে শুরু করেছে তাতে আমাদের চোখের ঘুম হারাম হয়েগেছে। তিনি বলেন নদী ভেঙ্গে গেলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না। আমরা কোথায় যাব, কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তাদের অভিযোগ নদীতে অবৈধভাবে বালু কাটা, জাল ঠেলা, অবৈধ ড্রেন স্থাপন, নদী পাড়ে পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় বার বার এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। পূর্বের নদী ভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখিন হয় স্থানীয়রা। বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প দেখিয়ে সরকারের মোটা অংকের টাকা চলে যায় সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের পকেটে। দুর্নীতি আর অনিয়মের ফলে টেকসই বেড়িবাধ নির্মান সম্ভব হচ্ছে না । আমাদের দাবি আর সিসি ব্লক দিয়ে ভেড়িবাধ রক্ষা করা হোক। নওয়াপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবর রহমান জানান, আমাদের উপজেলার সীমানা দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদীতে অবৈধ্য বালু উত্তোলন করায় বার বার ভাঙ্গন দেখা দেয়। এবিষয়ে কালিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ওবাদুল হক মল্লিক বলেন, আমি এলাকা পরিদর্শণ করেছি। উপরে জানানো হয়েছে। বাজেট পেলেই কাজ শুরু হবে।