আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলম্বিয়ায় মশাবাহিত জিকা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে ।ইতিমধ্যেই দেশটিতে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কলম্বিয়ার জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে। গত ১০ দিন আগে এই সংখ্যা প্রায় তিন হাজারের মত ছিল। খোদ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসবেশি এই তথ্য স্বীকার করেন।
গতকাল শনিবার প্রকাশিত কলম্বিয়ার জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের বুলেটিন এপিডেমিওলোজিতে বলা হয়েছে, কলাম্বিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৩১,৫৫৫ জন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ৫,০১৩ জন। শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহেই দেশটিতে জিকা ভাইরাস আক্রান্তের হার ২৩ শতাংশ বেড়েছে। আর গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে এই হার ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ। যারমধ্যে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশই নারীই ভেনেজুয়েলা সীমান্ত সংলগ্ন নর্তে দে সানতানদার প্রদেশের অধিবাসি বলে জানাগেছে ।
ইতিমধ্যেই কলম্বিয়ার কর্তৃপক্ষ সন্তান ধারণে ইচ্ছুক নারীদের ছয় থেকে আট মাস অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এবং সম্প্রতি ছোটমাথা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী ৪,০০০ সদ্যজাত শিশুর সঙ্গে জিকা ভাইরাসের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ বিষয়টি পরীক্ষা করছে ব্রাজিল। মেডিক্যাল পরিভাষায় ছোট মাথা বা ত্রুটিযুক্ত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মানোর সমস্যাটিকে বলা হয় ‘মাইক্রোসেফালি’।
জিকা সম্পর্কে এখনো সম্পূর্ণরূপে জানা সম্ভব হয়নি। এ রোগের কোনো প্রতিষেধকও নেই। আক্রান্তদের ৮০ ভাগের মধ্যেই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বরসহ সামান্য অসুস্থতা বোধ করেন, শরীরে ফুসকুড়ি ওঠে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
ক্যারিবীয় অঞ্চলের কলম্বিয়া পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় দেশ। দেশটির কার্তাগেনা এবং সান্তা মার্তা ভ্রমণপিয়াসীদের মূল আকর্ষণ। ওই দুটি অঞ্চলে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ মাসের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
রোগটি এত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে যে দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায় চলতি বছর ৪০ লাখের মতো মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হতে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু কলাম্বিয়াতেই ছয় লাখ মানুষ জিকায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জিকার প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন অঞ্চল থেকে আসা ব্যক্তির দেওয়া রক্ত গ্রহণ না করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। যদিও এরআগেই যুক্তরাষ্ট্রে ‘যৌন সংসর্গের’ মাধ্যমে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিরল একটি ঘটনার খবর পাওয়া যায়।সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়ায়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা বিরল।
ব্যবহারের উপযোগী প্রতিষেধক তৈরি করে বাজারে ছাড়তে দশ বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে তারা জিকার প্রতিশেধক আবিস্কৃারের কথা।
