ফিচার ডেস্কঃ সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্যের উঁচু নীল তুরা পাহাড়। সেখান থেকে পাখিদের সঙ্গে উড়ে আসে সাদা মেঘ। এপারে ছোট-বড় পাহাড়গুলোর গাছে গাছে কাঠ বিড়ালীর ছুটাছুটি। অনেক সময় গাছের উঁচু ডালে দৃষ্টি আটকে যাবে, দেখা মেলবে লজ্জাবতী বানর বসে আছে। পাহাড়ের মাঝে মনোরম লেক দেখে হয়তো দুপুরের রোদে ঘামে ভেজা শরীরকে শীতল করতে মন চাইবে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাবরাখালী গারো পাহাড় এনে দেবে সেই শীতল পরশ। এর অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে সবাইকে। তাইতো প্রকৃতির টানে শহরের কোলাহল ছেড়ে মানুষ ছুটে আসে গাবরাখালী পাহাড়ের সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে।
গাবরাখালী গ্রামে একসময় হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। সীমান্তঘেঁষা এই গ্রামটির উত্তর প্রান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা। ১২৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছোট-বড় ১৬৭টি টিলা। কোনোটি প্রায় ৭০ ফুট, আবার কোনোটি ২০০ ফুট উঁচু। টিলাগুলো স্থানীয়দের কাছে নানা নামে পরিচিত। চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালি টিলা, বাতাসি টিলা- এমন বাহারি নাম। এই টিলার উপর দাঁড়িয়ে সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্যের মানুষের জীবন ও জীবিকার দৃশ্য খুব কাছ থেকে দেখা যায়। সন্ধ্যায় ভারতের সীমানার দিকে নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে অপরূপ। হালুয়াঘাট পৌরশহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা গাবরাখালী পাহাড়। করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও এই ঈদ ও ঈদের পরের দুই দিনে এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার দর্শনার্থী ঘুরে গেছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ১ কোটি টাকার ওপর বরাদ্দ দিয়েছে। সেই বরাদ্দ থেকেই পর্যটনকেন্দ্রটির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। পরে জেলা প্রশাসন থেকেও এর বিকাশে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়, বর্তমানে যা দৃশ্যমান পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ, লেকে ঘুরতে দর্শণার্থীদের জন্য প্যাডেল বোটের ব্যবস্থাও রয়েছে। লেকজুড়ে দেখা মিলবে দেশি হাঁসের দল। এই লেকেই স্থানীয় এলাকাবাসীর আয় বাড়ানোর জন্য মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে মনোরম রেস্ট হাউস। এ ছাড়া বিশ্রামের জন্য গারো ভাষায় জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা) নামে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে।
পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পাহাড়ে রোপণ করা হয়েছে কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা, কফি গাছ। পাহাড়ের টিলায় ওঠার জন্য করা হয়েছে স্টিলের সিঁড়ি, গাড়ি রাখার জন্য গাড়ি পার্কিং জোন। পাহাড়ের কিনার বেয়ে ভারত থেকে বয়ে আসা ছোট ঝর্ণাধারায় রাবার বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণ করে বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া হয়। টিলায় বসবাসরত সেটেলারদের জন্য উপজেলা প্রশাসন আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্যও গৃহীত হচ্ছে আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড, পাশাপাশি স্থানীয় বেকার যুবকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রটি ঘিরে বিভিন্ন দোকানের পশরা সাজিয়ে বসেছেন স্থানীয়রা। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে এখানে প্রধান ফটক, সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, শিশুপার্ক, তথ্যকেন্দ্র, মিনি চিড়িয়াখানা ইত্যাদির কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, 'পর্যটনকেন্দ্রটির কাজ শেষ হলে এই উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি অনন্য ভূমিকা রাখবে।'
