নিউজ ডেস্ক : শত চেষ্টা করেও উদ্বেগটা চেপে রাখতে পারলেন না৷ ভোটপ্রচারের জন্য যে কোনও শর্তে জেল থেকে বের হতে মরিয়া মদন মিত্র সরাসরি সিবিআইয়ের আইনজীবীকেই প্রশ্নটা করে বসলেন, 'আর কতদিন আমাকে আটকে রাখবেন? কিছু একটা করুন৷' বুধবার এমনই দৃশ্যের সাক্ষী রইল আলিপুর আদালত চত্বর৷
সারদা রিয়েলটি মামলায় বুধবার প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীকে এসিজেএম সৌগত রায়চৌধুরীর এজলাসে তোলা হয়৷ কালো টি-শার্ট, কালো প্যান্ট, সাদা-কমলা রংয়ের স্নিকার্সে আপাত ঝকঝকে চেহারার মধ্যেও ছিল দুশ্চিন্তার ছায়া৷ প্রকাশ্যে সেই উদ্বেগের ছাপ না-থাকলেও মদনের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, 'প্রচারে বেরোতে পারছেন না বলে দাদার মনটা বেশ খারাপ৷ কিছুদিনের জন্য হলেও তিনি এলাকায় গিয়ে প্রচার করতে চান৷'
সেই উদ্বেগেরই ছাপই যেন ফুটে উঠল মদনের আর্জিতে৷ এজলাসে কাঠগড়ার পাশে চেয়ারে বসেছিলেন মদন৷ পাশে তাঁর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য ও বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে৷ তখনই মদন ডেকে নেন সিবিআই আইনজীবী পার্থসারথিকে৷ মদনের প্রশ্ন কিছুটা বিড়ম্বনাতেই পড়েন সিবিআইয়ের আইনজীবী৷ তিনি জানান, এতে তাঁর কিছু করণীয় নেই৷ তদন্তে যা উঠে আসছে, সেইমতো আদালতে আবেদন করা হচ্ছে৷ মদন পাল্টা বলেন, 'একটু বলে দেবেন, মে পর্যন্ত আমি কোনও আবেদন করছি না৷' পার্থ প্রশ্ন করেন, 'কাকে?' মদনের জবাব, 'আপনার এজেন্সিকে বলে দেবেন৷'
মদন যাই বলুন না-কেন, বিধানসভা ভোটের প্রচারে বাইরে বেরোতে খুব শিগগিরই তাঁর তরফে আদালতে প্যারোলের আবেদন জানানো হতে পারে বলে আইনজীবী মহলের খবর৷ এ দিন অবশ্য শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির বন্দির সুযোগসুবিধা এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা পরিষেবার আর্জি জানানো হয়৷ বৈশ্বানর বলেন, 'প্যারোলের বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি৷ প্রবীণ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে৷' তবে সিবিআই সূত্রের খবর, আদালতে প্যারোলের আর্জি জানালে তাদের তরফ থেকে আপত্তি করা হবে৷ সেখানেও প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করেই প্যারোলের আর্জি খারিজের জন্য ঝাঁপাবে সিবিআই৷ সে জন্যই মদনের এমন কাতর আবেদন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা৷
ভোটে কামারহাটি থেকে প্রার্থী ঘোষিত হওয়ার পর এ দিনই প্রথম আদালতে পেশ করা হয় মদনকে৷ তাঁকে স্বাগত জানাতে আদালত চত্বরে ভিড় করেছিলেন তাঁর অনুগামীরা৷ বেলা সওয়া ২টো নাগাদ তাঁর গাড়ি ঢুকতেই আদালত চত্বরে স্লোগান ওঠে, 'মদন মিত্র জিন্দাবাদ৷' কেউ কেউ ফুল ছুড়তে গেলে মদন তাঁদের নিষেধ করেন৷ অনুগামীদের কয়েকজন নিজেরাই বাকিদের সতর্ক করেন, পাছে এগুলি যুক্তি হিসেবে দেখিয়ে তাঁকে প্রভাবশালী প্রমাণের সুযোগ না-পায় সিবিআই৷ তবে আদালত চত্বর থেকেই কার্যত ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মদন৷ তিনি বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে প্রার্থী করে আমার এবং আমার পরিবারকে যে সামাজিক সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ৷ আমি ১৫ মাস ধরে জেলে রয়েছি, সেইসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি আমাকে প্রার্থী মনোনয়ন করেছেন৷' মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি যে আর প্রভাবশালী নন, সে কথা আগেই বলেছেন মদন৷
এ দিন ফের তিনি বলেন, 'আমি এখন আর প্রভাবশালী নই৷ প্রভাবশালী না জনপ্রিয়, এই ভোটে কামারহাটির মানুষ তারই জবাব দেবেন৷' তিনি আরও বলেন, 'আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ৷ বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না৷ আদালতের প্রতি আমার আস্থা আছে৷ কিন্ত্ত হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের বাইরেও মানুষের কোর্ট আছে৷ তাঁরাই এর বিচার করবেন৷' এজলাসের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার উপর অনেক বেশি নজরদারি রয়েছে৷ আমার তো মনে হয়, ছত্রধরের (মাহাতো) থেকেও বেশি৷' আগামী ১১ মার্চ কামারহাটির দেওয়ানপাড়ায় তাঁর হয়ে প্রচারে যাওয়ার কথা তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর৷ তবে কর্মীদের উদ্দেশে মদনের পরামর্শ, 'বড় মিটিংয়ের পাশাপাশি ছোট ছোট পকেটেও মিটিং করুন৷'
এ দিকে মদনের নির্দেশেই বুধবার বিকেলে কামারহাটিতে বিশাল মিছিল করে তৃণমূল৷ তার নেতৃত্বে ছিলেন মদনের দুই ছেলে স্বরূপ ও সোহম৷ মিছিলে স্লোগান ওঠে, 'কামারহাটি কাঁদছে, মদন মিত্র জিতছে', 'এই দুনিয়া বলছে, মদন মিত্র জিতছে' ইত্যাদি৷ প্রথমে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিনটের সময়৷ পরে তা পিছিয়ে সাড়ে পাঁচটা করা হয়৷ ওই মিছিলে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা সহ এলাকার প্রায় সব নেতাই ছিলেন৷ মিছিল শেষে স্বরূপ এবং সোহম দাবি করেন, তাঁর বাবা নির্দোষ৷ সত্যের জয় হবে৷ কামারহাটির মানুষ বাবাকে দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন৷