আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এমন একটি বিষয়কে হাতিয়ার করেছে সনিয়া গাঁন্ধী, যাতে মোদীর বিরুদ্ধে দলীয়, বিরোধী, মহিলা-বিরোধী প্রচারকে আরও তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়। ভারতবর্ষের রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই সরকারের। তবু কংগ্রেস চাইলে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনের বিতর্কে সংশোধনী না-ই আনতে পারত, ভোটাভুটিও না চাইতে পারত। কিন্তু মোদী সরকারকে যে এতটুকু জমি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গাঁন্ধী, গতপরশু নারী দিবসেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা, রাজস্থানে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। অভিযোগ তুলেছিল, এই অছিলায় আসলে দলিত-মহিলাদের ভোটে লড়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গোলাম নবি আজাদকে দিয়ে তাই সংশোধনীতে ভোটাভুটি চেয়ে সরকারের বিড়ম্বনা বাড়ানোর বিষয়ে অনড় থাকলেন সোনিয়া গাঁন্ধী ।
যদিও রাজ্য সভার এই বিতর্কিত ভোটাভুটিতে মায়াবতীর দল বিএসপি অনুপস্থিত ছিল এবং পশ্চিমবঙ্ের শাসকদল মমতা বন্দোপধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ভোট বর্জন করলেও বাকি বিরোধী দলের সাহায্যে সরকারকে পরাস্ত করে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করল সরকার । এ ভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন সনিয়া গাঁন্ধী ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করে কংগ্রেস অধ্যক্ষ সোনিয়া গান্ধী বলেন, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদী যতই আধিপত্য দেখান না কেনো, অথবা সোয়া ঘণ্টা ধরে রাহুল গাঁন্ধীকে নিশানা করার সুযোগ নেন না কেনো, রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীকে বুঝে শুনে চলতে হবে।
পঞ্চায়েতে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়ায় দলীয় ও মহিলা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন এই রাজনৈতিক প্রচারের ভিতও তৈরি করে রাখলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া।
ভবিষ্যতে এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে শুধু রাজনৈতিক প্রচারই নয়, একটি সংবিধান সংশোধনী বিল আনার জন্যও কংগ্রেস চাপ বাড়াবে সরকারের উপর। রাহুলও আজ বলেন, ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করে এ দেশে সব নাগরিকের ভোটে লড়ার অধিকার আদায় করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা বিঁধছেন অন্য ভাবে। তাঁদের বক্তব্য, শুধু পঞ্চায়েতে কেন? বিধায়ক-সাংসদ এমনকী কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাও তো তবে বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন ।
কংগ্রেস এই যে সংশোধনী আনতে চলেছে, তা অজানা ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। তাই রাজ্যসভায় বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সংশোধনী প্রত্যাহার করার আবেদন জানান। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বলেই মোদীর গলায় আজ লোকসভার মত ঝাঁঝও ছিল না। যদিও টিপ্পনিতে বিঁধতে ছাড়েননি কংগ্রেসকে। বলেছেন, ‘‘মৃত্যুর কোনও বদনাম হয় না। কেউ ক্যানসারে মারা গেলে রোগের দোষ দেয়, মৃত্যুর নয়। অনেক বয়সে মারা গেলে বয়সের দোষ দেওয়া হয়। তেমনই কংগ্রেসকে আক্রমণ করলে লেখা হয়, বিরোধীদের নিশানা করা হয়েছে। কংগ্রেসের বদনাম হয় না। সে দিক থেকে কংগ্রেস আশীর্বাদধন্য।’’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, তাঁকে পরাস্ত করেও কি,পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বিরোধীরা? নিদা ফজলির গজলের লাইন দিয়ে মোদী বক্তব্য শেষ করেন, ‘মুঝে গিরাকে আগর তুম সম্ভল সকো তো চলো' ।