নয়াদিল্লি সংবাদদাতা : গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদীর কথার উপর ভিত্তি করে গুজরাট টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনে ২০ হাজার কোটি রুপীর অপচয় করেছে। মোদী ঘনিষ্ট কয়েকটি কোম্পানি ও কতিপয় কর্তা ব্যাক্তির এতে লাভ হলেও একফোটাও গ্যাস মেলেনি । উল্লেখ্য ৭ই এপ্রিল- ২০০৫সালে গুজরাট বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, গুজরাট স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনে বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। বি জে পি-র অন্যতম তাত্ত্বিক গুরু দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ওই ব্লক থেকে গ্যাস পাওয়ার কথা বলে পরবর্তী দশ বছরে প্রায় ২০হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে গুজরাট সরকারের তহবিল থেকে।
গত ৩১শে মার্চ গুজরাট বিধানসভায় পেশ করা সি এ জি রিপোর্টের বিস্ফোরক তথ্য: এক ছটাক গ্যাসও মেলেনি এক দশকে, ভবিষ্যতেও কোনো সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে নেপোয় দই মেরেছে। রাজ্য সরকারের সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে থাকা বেসরকারি কোম্পানি বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে চলে গেছে। স্তরে স্তরে লাভবান হয়েছে আরো অনেকে। দুর্নীতি নিয়ে অন্যদের নানা কটাক্ষ করলেও গুজরাটে সি এ জি-র এই রিপোর্ট গুরুতর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে মোদীকে।
এই রিপোর্ট নরেন্দ্র মোদীর তথাকথিত ‘গুজরাট মডেল’ নিয়েই শুধু প্রশ্ন তোলেনি, দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে। গুজরাট স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ( জি এস পি সি) কে জি বেসিন প্রকল্প নিয়ে একাধিক অসত্য তথ্য প্রচার করেছে বলেও প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৫-র জুনে নরেন্দ্র মোদী বিধানসভায় ঘোষণা করেছিলেন ২০ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস পাওয়া গেছে। যার মূল্য হবে ২,২০,০০০কোটি টাকা। জি এস পি সি জানিয়েছিল প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের দাম হবে ৫.৭ডলার। বাস্তবে সরকার দাম নির্ধারণ করেছিল ৪.২ডলার। গুজরাট সরকারের সংস্থা ২০১১-র এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪টি ব্লক কিনেছিল। তার ৩৭টি ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনো উৎপাদনই হয়নি। ২১০০ কোটি টাকা ওখানেই নষ্ট হয়।
সি এ জি রিপোর্টে দেখা গেছে, জি এস পি সি-র তেল উত্তোলনের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও দেশের মতো বিদেশেও ব্লক কিনেছে এবং লোকসান করেছে। পরে ১১টি বিদেশি ব্লকও ছেড়ে দিয়েছে।
সি এ জি রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা’ দেখানো হয়েছে। এমন সংস্থাকে গ্যাস উত্তোলনের প্ল্যাটফর্ম বানাতে দেওয়া হয়েছে যাদের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিলো না। দুই যৌথ উদ্যোগের অংশীদার জিও গ্লোবাল ও জুবিলিয়ান্ট কোনো কাজেই না আসা সত্ত্বেও ২৩১৯কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাদের জন্য। এক টাকাও ফেরত আসেনি।
এই সি এ জি রিপোর্ট সামনে আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস । তারা বলছেন , মোদীর গুজরাট মডেল আসলে ধান্দার ধনতন্ত্র। জনগণের করের অর্থ ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। নিয়মকানুনের বালাই রাখা হয়নি। কংগ্রেস এই দুর্নীতির প্রসঙ্গ সংসদে তুলবে বলেও জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ।