আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন যে ভাষায় হুমকি দিচ্ছেন, কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছেন, তাতে উনি থাকাকালীন রাজ্যে অবাধ নির্বাচন সম্ভব কিনা সেই প্রশ্ন ওঠে।’‘উনি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মাপার কথা বলছেন। আর জনগণ ওঁকে ফুট গজে মাপতে শুরু করেছেন।’
১৫ই এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের বদান্যতার ওপরে ভরসা না করে মানুষকেই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্রিয় হতে আবেদন করলেন সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। গত শুক্রবার সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এতদিন মানুষকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এখন নির্বাচন কমিশনকেও যে ভাষায় হুমকি দিচ্ছেন তাতে উনি মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসে থাকাকালীন রাজ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব কিনা সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। আমি জানি না তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সদিচ্ছা নির্বাচন কমিশনের আছে কিনা। কিন্তু আমরা নির্বাচন কমিশনের ওপরে নির্ভর করে বসে নেই। আমরা মানুষের ওপরেই নির্ভর করছি, মানুষই এর মোকাবিলা করে মুখ্যমন্ত্রীকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচন কমিশন শোকজ করেছে নির্বাচন চলাকালীন আসানসোলে জেলা বিভাজন সংক্রান্ত ঘোষণার জন্য। তারপরে মুখ্যমন্ত্রী আরো আগ্রাসী ও নজিরবিহীন ভাষায় নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করে ভাষণ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে এই সামান্য বিষয়ে কেন শোকজ করা হয়েছে জানি না। কিন্তু এর থেকে অনেক বড় বড় বিষয় আছে ওঁকে শোকজ করার। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন যে ভাষায় বদলার কথা বলছেন, হুমকি দিচ্ছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছেন, তাতে উনি থাকাকালীন রাজ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব কিনা সেই প্রশ্নই ওঠে। এতদিন মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে ভয় দেখাচ্ছিলেন। এখন নির্বাচন কমিশনকেও ভয় দেখাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মাপবেন। নির্বাচন কমিশনের চোখে এসব কি ধরা পড়ছে না? ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে এবং এমন নজিরও রয়েছে যেখানে অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নির্বাচন করানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কী করবে বা আদৌ কিছু করার সদিচ্ছা আছে কিনা সেটা আমরা বলতে পারবো না। তবে এখনো পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ জমা পড়েছে তাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন নেয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো নির্বাচন কমিশনের ওপরে নির্ভর করে না থেকে নিজেদের শক্তিতে মানুষই মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন সূর্য মিশ্র। তিনি বলেন, হতাশ আর মরিয়া হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এখন ভয় দেখাচ্ছেন, কিন্তু কে তার পরোয়া করছে? উনি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মাপার কথা বলছেন। আর জনগণ ওঁকে ফুট গজে মাপতে শুরু করেছেন। মেপে মেপে মানুষ রায় দিচ্ছেন, ১৯শে মে মুখ্যমন্ত্রী টের পাবেন। সেদিন মানুষের সাজায় ওঁকে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ করতে যেতে হবে। মানুষই সর্বোচ্চ আদালত, মানুষই ওঁর মোকাবিলা করবে।
‘অধিকার কে কাকে দেয়/ অধিকার কেড়ে নিতে হয়’ গণসঙ্গীতের এই বিখ্যাত লাইন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা মানুষের কাছেই আবেদন করছি, নির্বাচন কমিশনের দাক্ষিণ্যের দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই। ভোট লুটের চক্রান্ত ব্যর্থ করে নিজের ভোট নিজে দিতে বুথে বুথে প্রস্তুত হোন।
কীভাবে নিজেদের অধিকার নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে তার ইঙ্গিত দিয়ে মিশ্র বলেছেন, সব বুথে জনগণের জোটের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট সুনিশ্চিত করতে হবে। এমন পোলিং এজেন্ট চাই যিনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন, ভয় বা লোভের কাছে কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবেন না, শাসকদলের যে কোনো চক্রান্ত দেখলেই প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ নথিভুক্ত করবেন এবং ইভিএম সিল করে পাঠানো পর্যন্ত বুথে থেকে ১৭গ ফর্মে ভোটের হিসাব বুঝে নেবেন। শুধু পোলিং এজেন্ট দিয়ে হবে না, সব বুথে মানুষের নজরদারি চাই। ভোট দিয়ে বুথ থেকে চলে গেলেই কাজ শেষ নয়, ধারেকাছে থেকে নজরদারি করতে হবে, আগের দিন থেকে নজরদারি করতে হবে যাতে ভোট লুটের চক্রান্ত সফল না হয়। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দল যতোই প্ররোচনা দিক, আমাদের সবাইকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আমাদের আসল লক্ষ্য, সব মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা। ঠান্ডা মাথায় সেই লক্ষ্যে এগোতে হবে। তৃণমূল ভেঙে প্রতিদিন মানুষ আমাদের সঙ্গে আসছেন, তাঁদের জন্য জায়গা করে দিতে হবে যাতে মানুষের জোট আরো শক্তিশালী হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের ভোটগ্রহণের আসনগুলির সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনেই তৃণমূল পরাস্ত হবে এবং পরবর্তী পর্যায়গুলিতে তৃণমূল আরো শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হবে বলে জানিয়েছেন সূর্য মিশ্র। তিনি বলেছেন, সব জায়গা থেকে রিপোর্ট আসছে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রার্থীদের পক্ষে এমন জনজোয়ার দেখা যাচ্ছে যা দশ পনেরো বছরে কখনো দেখা যায়নি। এই জনজোয়ারে শাসকদলের সব ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে। এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগেনি, শাসকদলের বাইকবাহিনীকে মানুষই রুখে দিয়েছে, বাইক ফেলে ওদের বাহিনীকে পালাতে হয়েছে।
বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের সম্পর্কে মিশ্র বলেছেন, পরাজয়ের আতঙ্কে মরিয়া হয়ে বীরভূমে ওদের আস্ফালনটা একটু বেশি হচ্ছে। কিন্তু ওখানেও মানুষের জোয়ারের মুখে ওরা দাঁড়াতেই পারবে না। মিশ্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না যে ওঁর সঙ্গে আর কেউ নেই, উনি এখন একা হয়ে গেছেন। উনি মরিয়া হয়ে কোন অফিসারকে কি নির্দেশ দিচ্ছেন সব খবর আমরা পেয়ে যাচ্ছি। কারণ সবাই জেনে গেছেন যে ১৯শে মে-র পরে উনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকছেন না।