আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কেন্দ্রের কোনও চাপের কাছেই তিনি নতি স্বীকার করবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মেমারিতে এক নির্বাচনী সভায় মমতার অভিযোগ , কংগ্রেস আর সিপিএমের সঙ্গে এখন বিজেপিও তাঁর পিছনে লেগে পড়েছে৷ তিন দল মিলে প্রতিনিয়ত তাঁর বিরুদ্ধে কুত্সা রটাচ্ছে৷ মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে বলেই ওরা ভয় পেয়ে এই কুত্সার আশ্রয় নিয়েছে৷ দিল্লি থেকে বাংলায় সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা হচ্ছে৷
এর পরই বিরোধীদের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি , 'যদি এরকম চলতে থাকে , তা হলে জেনে রাখো , শ্মশানের বুকে চিতা আমি জ্বালবই৷ ' তবে শ্মশানের বুকে চিতা জ্বালানোর কোনও ব্যাখ্যা তিনি দেননি৷ মমতা এ দিন বর্ধমানের মেমারি ও হুগলির পাণ্ডুয়ায় দু'টি সভা করেন৷ দুই সভাতেই ব্যাপক ভিড় হয়েছিল৷ বিরোধীদের যেমন তিনি হুমকি দিয়েছেন , তেমনি দুই জেলায় তাঁর নিজের দলের কোন্দল নিয়েও উদ্বেগ ধরা পড়েছে তাঁর ভাষণে৷
এর আগে মঙ্গলকোট এবং ভাতারেও দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই তিনি তৃণমূলের কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করেছেন৷ মেমারি ও পাণ্ডুয়ার সভাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ মেমারিতে এ বার আবুল হাসেম মণ্ডলকে টিকিট দেওয়া হয়নি৷ তাঁর জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে নার্গিস বেগমকে৷ তা নিয়ে হাসেমের অনুগামীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে৷ তিনি মঞ্চে যতবার নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন , ততবারই নার্গিস তাঁকে আটকে দেন৷
বিষয়টি নিয়ে মঞ্চে বসা নেতাদের মধ্যেই গুঞ্জন ওঠে৷ ঘটনাটি নজর এড়ায়নি তৃনমুলনেত্রী মমতারও৷ তিনি বলেন , 'হাসেমকে আমাদের প্রয়োজন৷ নতুন সরকারে আসার পর ওঁকে আমরা নির্দিষ্ট ভাবে ব্যবহার করব , গুরুত্বপূর্ণ পদ দেব৷ ' পাণ্ডুয়ার সভায় আবার মমতা বিবদমান সব গোষ্ঠীর নেতা ও প্রার্থীকে মঞ্চে তুলে শপথ বাক্য পাঠ করান৷ নেত্রীর নির্দেশে তাঁদের শপথ করে বলতে হয় , 'আমরা পাণ্ডুয়ার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জেতাব৷ ' এ দিন মেমারির সভায় শুরু থেকেই বিরোধীদের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা৷ তাঁর দাবি , গত পাঁচ বছরে তৃণমূল সরকার খুব ভালো কাজ করেছে বলেই বিরোধীদের সহ্য হচ্ছে না৷ তাই দিনরাত তাঁর বিরুদ্ধে কুত্সা রটানো হচ্ছে৷ তিনি চড়া সুরে বলেন , 'আমাকে চমকাবেন না , চমকালে আমি বর্ষাই৷
কারও ধমকানিকে পরোয়া করি না৷ আমার পিছনে এখন কংগ্রেস , সিপিএম আর বিজেপি ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ ' কর্মীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, 'মাথা ঠান্ডা রাখুন৷ কোনও ফাঁদে পা দেবেন না৷ ১৯ মে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেব৷ ' বিরোধীদের প্রতি ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার হুমকি তিনি আগেও দিয়েছেন৷ তা নিয়ে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও দায়ের করেছেন৷ কমিশন যেদিন তাঁকে আসানসোলে নতুন জেলা গঠনের কথা বলায় শো -কজ করার কথা জানায় , সে দিনই মমতা বলেন , 'শুনলাম , আমাকে নাকি শো -কজের চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার কথা বলে আমি বেশ করেছি৷ একশো বার বলব , হাজার বার বলব , কোটি বার বলব৷ '
অথচ ঘটনা হল , কমিশন ওই কথা বলার জন্য তাঁকে শো -কজ করেনি৷ যা নিয়ে বিরোধীরা ক্ষোভ প্রকাশও করেন৷ সোমবারই রাজ্যে নির্বাচনী সভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চড়া সুরে আক্রমণ করে গিয়েছেন মমতাকে৷ এ দিন মমতা সেই আক্রমণ ফিরিয়ে দিয়েছেন মোদীকে৷ তাঁর নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , 'প্রতিদিন তোতা পাখির বুলি আওড়ানো হচ্ছে৷
জনগণ এর জবাব দেবে৷ আমার সরকার যা আয় করে , তার বড় অংশ কেটে নিয়ে যায় দিল্লি৷ ' এর পরই তাঁর হুঙ্কার , 'তোমার কাছে দলের পতাকা বিক্রি করব না৷ তুমি যতই চাপ দাও , কিছুতেই মাথা নত করব না৷ তৃণমূল মানে হল শিরদাঁড়া খাড়া৷ ' বাম -কংগ্রেস জোটকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন , 'কংগ্রেস তো সিপিএমের কাছে ঝান্ডা বিক্রি করে দিয়েছে৷ ওদের লজ্জাও করে না৷ ' যথারীতি তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , 'সিপিএম ৩৪ বছরে যা করতে পারেনি , আমার সরকার সাড়ে চার বছরে সেই কাজ করে দেখিয়েছে৷ ওদের উন্নয়নের অর্থ ছিল গ্রাম দখল , খুনোখুনি আর রক্তপাত৷ এখন রাজ্যের মানুষ অনেক শান্তিতে আছেন৷ ভালো আছেন৷ সেটা বিরোধীদের সহ্য হচ্ছে না৷ তাই প্রতি মুহূর্তে ওরা কুত্সা করছে৷ '
এ দিন অবশ্য স্টিং অপারেশন নিয়ে মমতা কোনও কথা বলেননি৷ সোমবার কলকাতার বৌবাজারে এক নির্বাচনী সভায় তিনি স্টিং অপারেশনের উল্লেখ করে বলেন , 'হঠাত্ করে ২০১৪ সালে করা একটা বেআইনি কোম্পানিকে এনে কেন এ সব করছ নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরে ? আগে জানলে নিশ্চয় ভাবতাম৷ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর তো তা আমি বদলাতে পারি না৷ ' রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা , এই কথা বলে মমতা স্টিং অপারেশনকে মান্যতাই দিয়ে দিয়েছেন৷ যে মমতা আগে এটিকে ভেজাল বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন , সেই নেত্রী কার্যত দলের নেতা -মন্ত্রীদের ঘুষ খাওয়ার ছবিকে বৈধতা দেওয়ায় দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে৷ যাঁদের ছবি স্টিং অপারেশনে ধরা পড়েছে , তৃণমূলের সেই নেতা -মন্ত্রীরা নেত্রীর ওই কথার পর দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছেন৷ দলের মধ্যে এ নিয়ে নানা কথাও হচ্ছে৷ সম্ভবত সেই কারণেই এ দিন মমতা আর স্টিং অপারেশনের প্রসঙ্গ তোলেননি৷